রাজশাহী মহানগরীর রামচন্দ্রপুর, কেদুরমোড় এলাকার প্রায় ৪৫টি খেটে খাওয়া পরিবার জৈনক অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ মিথুনের বিরুদ্ধে তাদের জীবিকা অর্জনের পথে বাধা সৃষ্টি, হয়রানি ও মিথ্যা মামলার হুমকির অভিযোগ এনে আজ এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। এলাকার বাসিন্দারা জানান, তানভীর আহমেদ তাদের বিরুদ্ধে শব্দ দূষণের অভিযোগ তুলে একাধিক মামলা দায়ের করেছেন, যা তাদের দৈনন্দিন জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
সংবাদ সম্মেলনে এলাকার প্রতিনিধি মোঃ রাশীদুল হাসান জানান, তারা ২০২১ সাল থেকে নাটোর রোড সংলগ্ন হোল্ডিং নং ৬১৯-এ টিনের চালায় নির্মিত দোকানে ডেকোরেটর, ফার্নিচার, চা-স্টল, সেলুন, অটো গ্যারেজ ও অটো রিকশা মেরামতের ছোট ওয়ার্কশপ পরিচালনা করে আসছেন। এসব দোকানে প্রায় ৪৫টি পরিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। তিনি বলেন, “আমরা বেকারত্ব দূর করে খেটে খাচ্ছি, কিন্তু জৈনক অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ আমাদের জীবিকার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তিনি শুধুমাত্র নিজের অসুবিধার কথা বলে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন।”
স্থানীয়রা জানান, তানভীর আহমেদের বাড়ি তাদের ওয়ার্কশপ থেকে প্রায় ১৪০ গজ দূরে অবস্থিত এবং এলাকাটি মহাসড়ক সংলগ্ন মিশ্র এলাকা, যা আবাসিক নয়। তারা দাবি করেন, শব্দ দূষণের অভিযোগ কেবল তানভীর আহমেদের পক্ষ থেকে এসেছে, অন্য কোনো বাসিন্দা বা পরিবার এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেনি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত এক দোকানদার বলেন, “আমাদের এই দোকানগুলো আমাদের পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস। এখান থেকে আমরা আমাদের সন্তানদের লেখাপড়া ও দৈনন্দিন খরচ চালাই। অ্যাডভোকেট সাহেবের মামলার কারণে আমরা এখন নিরুপায়।”
জানা যায়, তানভীর আহমেদ প্রথমে জায়গার মালিকের কাছে দোকানের মাঝ দিয়ে রাস্তার জন্য আবেদন করেছিলেন, কিন্তু মালিক তাতে সম্মত হননি। এরপর তিনি পরিবেশ অধিদপ্তরে শব্দ দূষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের তদন্তে দোকানদারদের পক্ষে রায় দেওয়া হলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আদালতে আরেকটি মামলা (সি.আর ১২৪৬/২০২৩, বোয়ালিয়া) দায়ের করেন, যার তদন্তের দায়িত্ব পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-কে দেওয়া হয়। গত ২০ জুলাই ২০২৫-এ পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সরেজমিনে পরিদর্শন করে দোকানদারদের কিছু পরামর্শ দেন এবং তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন।
মোঃ রাশীদুল হাসান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা দরিদ্র এবং খেটে খাওয়া দিনমজুর। অ্যাডভোকেট সাহেব আমাদের পেটে সরাসরি লাথি মারছেন। তিনি তার ক্ষমতা ও আইনি জ্ঞানর ব্যবহার করে আমাদের হয়রানি করছেন। আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন জানিয়েছি যাতে আমাদের জীবিকার পথ অবরুদ্ধ না হয়।” তিনি আরও জানান, তারা মামলার নথি ও গণস্বাক্ষরসহ জেলা প্রশাসকের কাছে একটি আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন।
স্থানীয় একজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এই এলাকায় অনেক দোকান ও ব্যবসা রয়েছে। মহাসড়কের পাশে শব্দ হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু অ্যাডভোকেট সাহেব শুধু এই দোকানগুলোর উপর ক্ষিপ্ত। এটা স্পষ্ট যে তিনি ব্যক্তিগত কারণে আমাদের হয়রানি করছেন।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অন্য একজন দোকানদার অভিযোগ করেন, তানভীর আহমেদ তাদের বিরুদ্ধে বারবার মিথ্যা অভিযোগ ও মামলার হুমকি দিচ্ছেন, যা তাদের মানসিক ও অর্থনৈতিকভাবে চাপে ফেলেছে। তারা প্রশাসনের কাছে এই হয়রানির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।
এ বিষয়ে জৈনক অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে এলাকার বাসিন্দারা জানান, এই ঘটনা স্থানীয়ভাবে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে এবং এর ফলে দোকানদারদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যায়নি। তবে আবেদনকারীরা আশা প্রকাশ করেছেন যে, প্রশাসন তাদের সমস্যার সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে এবং তাদের জীবিকা নিশ্চিত করবে।